হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী।
————————-আহমাদ হাসান গাজীপুরী।
পবিত্র কুরআনের সূরা হা-মীম সেজদাহ ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেন-যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মানুষকে ডাকে ও সৎ কাজ করে এবং বলে ‘আমি তো আত্নসমর্পনকারী ‘ তার কথার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে..? পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠ ইনসান তাঁরা যারা দ্বাঈ ই’লাল্লাহ । আর সেই সমস্ত দ্বাঈ ই’লাল্লাহদের মধ্যে অন্যতম হলেন হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ)। মূলত শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) নামটি একটি ইতিহাস, একটি আন্দোলন, একটি বিপ্লব, একটি সংস্কৃতি, একটি দেশ ।উপমহাদেশে ঊনবিংশ শতাব্দীতে পথহারা মুসলমানদের রাহবার,লক্ষ কোটি বিধর্মীকে ইসলামের দিকে দীক্ষিত করে, যিনি বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক স্থপতি হিসেবে ইমানদার মুসলমানদের হৃদয়ের গহিনে স্থান করে নিয়েছেন। যার দাওয়াত এবং তাবলীগের ফলোশ্রুতিতে কোটি কোটি লোক মুসলমান হয়েছে, শুধু তাই নয় আজ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে আমরা স্বাধীনভাবে একজন মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিয়ে বসবাস করতে পারছি কিন্তু এই মহান ওলীর ওসিলাতে। যদিও আমরা সেই ইতিহাস বেমালুম ভুলে গিয়েছি।তাই এই মহান ওলীর সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পর্কে জ্ঞান থাকাটা এখন সময়ের দাবি।
♦♦♦প্রাথমিক জীবনঃ
বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক স্থপতি হল; হাদিয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) । উপহমাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অন্যতম । ঊনবিংশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য সমাজসংস্কারক এবং তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়ার অন্যতম প্রচারক হল; হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) । এই মহান ব্যক্তিত্ব পৃথিবীর বুকে ১৮০০ খৃষ্টাব্দের ১২ জুন, ১২১৫ হিজরীর ১৮ই মুহাররাম, ভারতের উত্তর প্রদেশের জৈনপুরের মোল্লাটোলা মহল্লায় জন্ম গ্রহন করেন । তার পিতার আবু ইব্রাহিম শেখ মুহাম্মাদ ইমাম বখশ । তিনি ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) এর ৩৫ তম বংশধর ছিলেন । জন্মের পর এই মহান ওলীর নাম রাখা হয়েছিলঃ মুহাম্মাদ আলী । ইতিহাস সাক্ষী পরবর্তীতে তার অলৌকিক ঘঠনা এবং অসংখ্য কারামাত দেখে লোকসমাজ তাঁকে মুহাম্মাদ আলীর পরিবর্তে কারামাত আলী নামে ডাকতো । আজ সে এ নামেই সর্বজনস্বীকৃত এবং পৃথিবীর লোক সমাজের কাছে পরিচিত ।
♦♦♦শিক্ষা এবং পরর্বতী জীবনঃ
হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) তাঁর পিতার নিকট প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেন এবং পরবর্তীতে মাওলানা কুদরতুল্লাহ রুদলবী ও আহমাদুল্লাহ আল্লামীর নিকট পবিত্র হাদিস শিক্ষা লাভ করেন । আঠারো বছর বয়সে ইলমে তাসাউফ শাস্ত্রে আগ্রহী হয়ে রায়বেরেলিতে তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সাইয়্যেদ আহমাদ বেরলভী (রহঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর নিকট নকশেবন্দীয়া তরিকার বায়াত গ্রহন করেন । তৎকালিন সময়ে বিখ্যাত এক মুজাহিদ ছিলেন সাইয়্যেদ আহমাদ বেরলভী (রহঃ) । তার নির্দেশেই তিনি বাংলা, বিহার, কলকাতা সহ সমগ্র বাংলায় দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে অমুসলিম থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মুসলমান করেন এবং তাদেরকে ইসলামের সঠিক তাহজিব তামাদ্দুম শিক্ষা দেন ।
হাদিয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) যখন বাংলা অঞ্চলে সফরে আসেন, এসে দেখলেন এই অঞ্চলের মুসলমানরা নামের শুরুতে শ্রী ব্যবহার করে, লুঙ্গির পরিবর্তে ধুতি, টুপির পরিবর্তে টিকলী, মহিলারা ঘোমটার পরিবর্তে সিঁদুর পড়তে অভ্যস্ত । এই ধরনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য নিজ জমি বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে দুই লক্ষ লুঙি ক্রয় করে এদেশের মুসলমানদের হাদিয়া করেন । এমনকি তাঁর দাওয়াতের ফলে লক্ষ লক্ষ মুসলমান হেদায়াতের রাস্তা খুজে পায় ।
♦♦♦কয়েকটি সুচিন্তিত মতামতঃ
১… সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহঃ) তাঁর বিখ্যাত কিতাব “তারিখে দাওয়াত ও আজিমাতের” মধ্যে লিখেনঃ-
আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ)-এর হাতে ৮০ হাজার লোক মুসলমান হয়েছে । খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ)-এর হাতে ৯০ লক্ষ লোক মুসলমান হয়েছে । আর হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর হাতে সরাসরি এক কোটি লোক মুসলমান হয়েছে ।
২… বিখ্যাত ইংরেজ লেখক William Hunter এর লিখিত “The Indian Muslims” বইতে স্পষ্ট লিখা আছে; ১৮৭১-১৮৯১ সাল পর্যন্ত একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রতি বছর ২০% করে মুসলমান বৃদ্ধি পেয়েছে । ভারতবর্ষের পশ্চিমান্তে যেখানে হিন্দু ছিল ৭০% আর মুসলিম ছিল ৩০% , সেখানে দ্রুত সময়ে মুসলমানের সংখ্যা বেড়ে হয় ৭০% আর হিন্দুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০% । তাই মুসলিম সংখ্যাধিক্যের কারণে দেশ বিভক্তির পর বৃটেন থেকে ইংরেজ গভর্নরকে শোকজ করা হয়, মুসলমানদের সংখ্যা রাতারাতি পাল্টে যাওয়ার পিছনে কি কারণ ?? প্রদেশের ইংরেজ গভর্নর জরিপ করে রিপোর্ট প্রেরণ করল যে, এর পিছনে একটি মাত্র ব্যক্তি কাজ করছেন । তিনি হলেন হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) । যিনি ভারতের উত্তর প্রদেশ জৈনপুর হতে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল বিধ্বস্ত ঢেউকে পারী দিয়ে সুদীর্ঘকাল গ্রামে গঞ্জে, মাঠেঘাটে, নদীর বাঁকে বাঁকে দ্বীন ইসলাম প্রচার ও প্রসারে অবিস্বরণীয় অবদান রাখেন । যার কারণে তাদের এত পরিশ্রম ব্যর্থ।
৩… ইতিহাস সাক্ষী হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর হাতে সরাসরি এক কোটি লোক কালেমা পড়ে মুসলমান হয় । আর তাঁর মুরিদ খোলাফাগণের হাতে আরো দুই কোটি মানুষ মুসলমান হয় । সর্বমোট তিন কোটি অমুসলিম কালেমা পড়ে মুসলমান হয় । যা একমাত্র হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর অবদান । আর এই জন্যই মুসলমানের সংখ্যা দ্বিগুণ এর চেয়ে বেশী হয়ে যায় । এর ফলে তখনই দাবী উঠে, দেশ বিভক্তির । বাধ্য হয়ে ইংরেজ সরকার দেশ বিভক্ত করেন । ফলে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও হিন্দুস্থান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় । এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্থান ও পশ্চিম পাকিস্থান অর্থাৎ বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পায় । আমরা এই মহান ব্যক্তির কারণেই একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি এবং এই স্বাধীন বাংলায় আজ বসবাস করতে পারছি । আমরা সকলেই জানি ভারতবর্ষ বিভক্তির পিছনে মূল কারণ হল, টু নেশন থিউরী অর্থাৎ দ্বি-জাতি তত্ত্ব । যদিও শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না । কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী দেয়; পরোক্ষভাবে শাহ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) ছিলেন রাজনীতির মূল শক্তি অর্থাৎ আধ্যাত্মিক স্থপতি । কারণ দেশ যদি বিভক্তি নাই হতো তাহলে পাকিস্তান নামে কোন রাষ্ট্র হতো না । আর পাকিস্তান না আসলে বাংলাদেশ নামে কোন দেশের অস্তিত্ব হতো না । তাই যে সকল রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের অধিকাংশই হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর মুরিদ বা মুতাকিদ ছিলেন । কাজেই ইতিহাস গবেষণা করলে একথা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় যে, বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক স্থপতি হলেন; হাদিয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) ।
♦♦♦সমাপনি জীবনীঃ
হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) বাংলাদেশ ও ভারতের বহু স্থানে সুদীর্ঘ একান্ন বছর ধরে ধর্ম প্রচার ও ধর্ম সংস্কার মূলক কার্যাদি সুসম্পন্ন করার পর অবশেষে ১২৯০ হিজরীতে রংপুর শহরে আগমন করেন এবং এই শহরের মুন্সিপাড়া নামক স্থানে দাওয়াতের কাজে অবস্থান করেন । এখানে তিনি ১২৯০ হিজরির ২রা রবিউস সানী মোতাবেক ১৮৭৩ সালের ৩০শে মে ইন্তেকাল করেন । প্রতি বছর হাদিয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর মাজারে ২ই রবিউস ছানী বার্ষিক ঈসালে সাওয়াব মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় । এ মাহফিলে প্রতিবছর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন; আব্বাসী মঞ্জিল জৈনপুর দরবার শরীফের বর্তমান গদ্দিনাশীন পীর আল্লামা মুফতী ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ওয়া সিদ্দিকী পীর সাহেব জৈনপুরী ।
আলহামদুলিল্লাহ !! বাংলাদেশে কয়েকটা শিরক, বেদয়াত মুক্ত মাজার থাকলে অবশ্যই হাদিয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ)-এর মাজার সবার উর্ধে ।
সুতরাং, এ ধরণের দায়ী ইলাল্লাহ দ্বারা কখনোই শিরক বা কুফর হতে পারে না । যারা এই মহান দায়ীকে কাফের বলে, ইতিহাস সাক্ষী তারা সকলেই বিগতকালে ইংরেজদের পাচাটা গোলাম ছিল । তাদের কিছু উত্তরসূরি এখনো বাংলার আনাচেকানাচে রয়েছে ।
♦♦♦
শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ)
সম্পর্কে মিথ্যাচারের জবাবঃ
কুরআনুল কারীমের সুরা নিসার ৪৩ নং আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা ঘোষণা করেন-
يايها الذين آمنوا لا تقربوا الصلاة و أنتم سكر(آلخ)
হে ইমানদারগণ !! তোমরা নামাজের নিকটবর্তী হয়োনা, নেশাগ্রস্ত অবস্থায়….।।
এই আয়াত নিয়ে যদি কেউ অপব্যাখ্যা করতে চায়, যে কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা’য়ালাই তো বলে দিয়েছেন তোমরা নামাজের নিকটবর্তী হয়োনা ।। কিন্তু কেউ যদি
و أنتم سكري
অর্থাৎ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এটাকে গোপন করে তাহলে আমরা তাকে বর্ণচোরা,জাহেল ছাড়া আর কিছুই বলতে পাড়িনা। কারণ এখানে বিষয়টি সুস্পষ্ট অপব্যাখ্যার কোন সুযোগ নেই…।।
ঠিক তেমনিভাবে হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর যখীরায়ে কারামাত কিতাবে কেউ কেউ তাঁর কথা গোপন এবং অপব্যাখ্যা করে তাঁর নামে মিথ্যাচার করতে চায়, যা চরম ধৃষ্টতার সামিল । ইতিহাস সাক্ষী যারাই শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর নামে মিথ্যাচার, গিবত, শিকায়াত করেছে তারাই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে ।। আর যারা অপব্যাখ্যা করে তারা ইহুদিদের বিশ্বাসকে অন্তরে ধারণ করে তাদের মিশনকে অগ্রবর্তী করে দিচ্ছে, যেমন ইহুদিদের একটি বিশ্বাস হল, একটি মিথ্যা কথা বারংবার বললে তা সত্যে পরিণত হয়ে যায় । সেই মিশনকে সামনে রেখে যারা বারংবার হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) লিখিত কিতাব নিয়ে মিথ্যাচার করে চলছে তাদেরকে আমরা বলবো শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর আক্বিদা সুস্পষ্ট। এটা নিয়ে মিথ্যাচারের কোন সুযোগ নেই….। কারণ যারা দ্বায়ী ইলাল্লাহ তাদের হেফাজত ও কেফালতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালাই নিয়ে থাকেন । এটা আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর মুমিন বান্দার সাথে একটি ওয়াদা। মহান রব এই ওয়াদা কখনো বরখেলাপ করেন না । তাই বলবো হাদিয়ে বাঙ্গালের নামে অপপ্রচার, মিথ্যাচার,, করে কোন লাভ নেই বরং এর যারা ইংরেজদের পাচাটা দালালিতে লিপ্ত তাদের মুখুশটাই আজ জাতীর সামনে প্রকাশিত হচ্ছে ।।
হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) উপমহাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় বুযুর্গ প্রখ্যাত ওলীয়ে কামেল ছিলেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বহু কিতাব লিখেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে,যখীরাতে কারামাতসহ তার কোন কোন কিতাবে মধ্যে চক্রান্তকারীরা তাহরিফ করেছেন। এমনকি আহমাদ রেজাখান বিষয়টিও স্বীকার করেছেন । ফতওয়ায়ে রেজভিয়্যাহ মধ্যে বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত মাসালাসমূহের নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছে । এর মধ্যে মালাবুদ্দা মিনহু,মিফতাহুল জান্নাত,বেহেশতী জেওর সম্পর্কে একটি প্রশ্নের জবাবে আহমাদ রেজাখান সাহেব বলেছেন————-
()বাংলা()
মালাবুদ্দা মিনহুর মধ্যে অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং মিফতাহুল জান্নাত ওহাবীদের হাতে রয়েছে।যার মধ্যে অনেক সংশোধন (পরিবর্তন, পরিবর্ধন) হয়েছে…।।
(ফতওয়ায়ে রেজভিয়া, খন্ড ১২, পৃষ্ঠা-২১২)
একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট মিফতাহুল জান্নাত হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর লিখিত একটি কিতাব। স্বয়ং আহমাদ রেজাখানের ফতওয়া থেকেও বুঝা যায়, মাওলানা শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর কিতাবের মধ্যে পরিবর্তন করা হয়েছে।
♣♣♣হযরত মাওলানা শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী(রহঃ) এর বক্তব্য বিকৃতি ও অপব্যাখ্যার জবাবঃ-
তথাকথিত রেজভীদের মারাত্মক একটি স্বভাব হচ্ছে যে,তারা বুযুর্গদের বইয়ে যা নেই তা প্রবিষ্ট করে কিংবা কোনোভাবে তাহরিফ করে, জঘন্য মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে বুযুর্গদের বিতর্কিত করার অপচেষ্টা লিপ্ত থাকে । যেমন তারা বিশ্ববিখ্যাত খুতবায়ে ইবনে নাবাতা’র মধ্যেও নিজস্ব মনগড়া মতবাদ প্রচারের লক্ষে হাদীসকে বিকৃত করেছেন। ঠিক তেমনিভাবে শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী(রহঃ) এর যখীরায়ে কারামাত কিতাবের যীনাতুল মুছুল্লী অংশে দীর্ঘ আলোচনা পেশ করেছেন। তথাকথিত রেজভিদের নেতা আব্দুল করিম মাস্টার তার রচিত ইজহারে হক্ব কিতাবে এর কিছু অংশ তাহরিফ করে অপব্যাখ্যা করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। আমরা তার সঠিক ব্যাক্ষাটি আপনাদের খেদমতে পেশ করলাম। যাতে সঠিক জ্ঞানটা আমাদের নিকট দিবালোকের স্পষ্ট হয়ে যায়….।।
♣♣♣নামাজে রাসুল (সাঃ) এর ধ্যান নিয়ে অপব্যাখ্যা জবাবঃ-
“অন্ধকারের মধ্যেও যেমন কম বেশি পার্থক্য থাকে ওয়াসওয়াসায়ও অল্প খারাপ ও বেশী খারাপের পার্থক্য রয়েছে। যেমন ব্যভিচারের ওয়াসওয়াসা হতে নিজের স্ত্রীর সাথে মিলনের ধ্যান কিছুটা ভাল। ইচ্ছা করে নামাযের মধ্যে নিজের পীরের ধ্যান করা এবং এমনি ধরনের কোনো বুযুর্গের খেয়াল করা ও নিজের অন্তরকে ঐ দিকে ধাবিত করা গরু-মহিষের কথা ভাবার চেয়েও বেশী খারাপ। এমনকি ঐ স্থানে হুজুর সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ধ্যান ও খেয়াল করাও কাজের কথা নয় ”
( যখীরায়ে কারামাত,পৃষ্ঠা-২৩১)
♣♣♣যখীরায়ে কারামাত এর বাংলা অনুবাদঃ-
ظلمات بعضها فوق بعض (যুলুমাতুন বা’দ্বাহা ফাওক্বা বা’দ্বিন ) “কেন অন্ধকার কোন অন্ধকারের ওপরে ” অর্থাৎ অন্ধকারের মধ্যেও যেমন কম বেশী পার্থক্য থাকে ) ওয়াসওয়াসায়ও অল্প খারাপ ও বেশী খারাপের পার্থক্য আছে ।যেমন ব্যাভিচারের ওয়াসওয়াসা হতে নিজের স্ত্রীর সাথে মিলনের ধ্যান কিছুটা ভাল। ইচ্ছা করে নামাজের মধ্যে নিজের পীরের ধ্যান করা এবং এমনি ধরনের কোন বুযুর্গ ব্যক্তির খেয়াল করাও নিজের অন্তরকে ঐ দিকে ধাবিত করা গরু-মহিষের কথা ভাবার চেয়েও বেশী খারাপ। এমনকি ঐ স্থানে হুজুর সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ধ্যান ও খেয়াল করাও কাজেও কথা নয়।
(যখীরায়ে কারামাত, বাংলা অনুবাদ,১ম খন্ড,পৃষ্ঠা-২৯)
(মূল লেখাটি কমেন্টে দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ)
♣♣তথাকথিত রেজভীদের পরিবর্তন করা বক্তব্য (যা আসলে যখীরায়ে কারামতে নেই)
♣♣♣বাতিল আক্বিদা-১.
(যখিরায়ে কারামাত ১ম খন্ড ২৩১ পৃষ্ঠা) …..।
নামাজে রাসুলে পাক সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেয়াল হতে নিজের গরু -গাধার খেয়ালে ডুবে থাকা ভাল। ইচ্ছা করে রাসুলে পাকের খেয়াল করলে মুশরিক হবে। আর অনিচ্ছায় নবী পাকের খেয়াল এসে গেলে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়েছে মনে করে ওয়াসওয়াসা ওয়ালী এক রাকাতের পরিবর্তে চার রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হবে।
(সিরাতে মুস্তাকিমে অনুরুপ রয়েছে) (ইজহারে হক্ব-পৃষ্ঠাঃ১৪৪)
এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে,রেজভীরা হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর ভাষ্যকে বিকৃত করে উপস্থাপন করেছে ।মূল যখীরায়ে কারামাত ও রেজভীদের দেয়া উদ্ধৃতি তুলনার সাথে আকাশ পাতাল ব্যবধান । হাদিয়ে বাঙ্গাল শাহ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) কি নবী করিম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সে গরু গাধার সাথে (নাউযুবিল্লাহ) তুলনা করেছেন???
না বরং রেজভিরা আল্লাহর ওলীকে বিতর্কিত করার জন্য নিজেরাই নবী করীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গরু-গাধার সাথে তুলনা করেছেন…!!! (নাউযুবিল্লাহ)
কোন কোন আলেম দাবি করন যে,যখীরায়ে কারামাতে ভাষ্যের মধ্যে রেজভিরা তাহরিফ করেছেন । যদি ধরেও নেওয়া হয় যে,যখীরায়ে কারামাত রেজভিরা তাহরিফ করেনি, বরং কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর লেখাই হুবহু রয়েছে। তারপরও রেজভীরা যেরুপ বেয়াদবিমূলক ভাষা প্রয়োগ করেছে, তা এতে পাওয়া যায় না। কেননা তিনি যেটা বলেছেন তা হলোঃ-
“এক্ষত্রে নবী করিম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ধ্যানও কাজের কথা নয়”
একই পৃষ্ঠার পরবর্তীতে কেউ যাতে ফেৎনা ছড়াতে না পারে বা ভুল না বুঝে সে লক্ষে তিনি বলেছেন –
মোট কথা এখানে ওয়াসওয়াসার শ্রেনীগুলোর পার্থক্য বর্নণা করা হলঃ-
আল্লাহর দরবারে খুব সতর্কতার সাথে দন্ডায়মান হওয়া উচিত।যাতে মাঝপথে কোন রুপ প্রতিবন্ধকতা না থাকে। এসব কথায় কোন পীর-মুর্শিদ অসন্তুষ্ট হবেন না এবং রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি কেউ বেয়াদবিও মনে করবেন না ।
এরুপ বক্তব্যের পরও রেজভীরা যা বলে তা তাহরিফ ছাড়া আর কিছুই নয়?????
যদি তারা বলে যখীরায়ে কারামাতের ভাষ্য তারা যেরুপ বলেছে সেরুপ, তাহলে হতে পারে যখীরায়ে কারামাতের কোন সংস্করণে তারা উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে তাহরীফ করে নিয়েছে। কেননা, রেজভীরা নবী করীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে যেরুপ বেয়াদবিমূলক ধৃষ্টতাপুর্ণ ইমানহরণকারী বাক্য বানিয়ে লিখেছে তা বাজারে প্রচলিত যখীরায়ে কারামাতের বাংলা ও উর্দ্দু কোন সংস্করণেই নেই।
উল্লেখ্য, কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) যা লিখেছেন তা আদব রক্ষা করে লিখেছেন এবং যাতে কেউ ভুল না বুঝে এজন্য পরবর্তীতে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। কিন্তু রেজভীরা উদ্দেশ্যেমূলকভাবে তার ভাষাকে আগ পিছ কর্তন করে,যা লিখেননি তা সংযোজন করে এ মহান ওলির উপর অপবাদ দিয়েছে ।।।। যা চরম ধৃষ্টতা ছাড়া বৈ আর কিছুই নয়….।।।
তাই বলবো
يايها الذين آمنوا لا تقربوا الصلاة و أنتم سكر(آلخ)
এই আয়াতে যেমনিভাবে বলা হয়েছে তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজের নিকট যাবেনা। এটা যেমনিভাবে পূর্নাঙ্গ অর্থ, ঠিক তেমনিভাবে নামাজে রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেয়াল করার সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝে গুলা পানিতে মাছ শিকার করাটা ব্যর্থ চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই না….।।
♦♦♦
আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকেও এই ধরণের দ্বায়ী ই’লাল্লাহ হওয়ার তাওফিক দ্বান করুন আল্লাহুমা আমিন।
(সংগৃহীত)